ভেবেছিলাম সাকিবকে নিয়ে আর কিছু লিখবো না।সাকিবকে নিয়ে কিছু লিখলে আমি একটা ভুল বোঝাবুঝির শিকার হই।অনেকে ভেবে বসেন,আমি বুঝি সাকিব বিদ্বেষী।কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়।সাকিব আল হাসান শুধু বাংলাদেশের জান নয়, আমারও জান।আমি সাকিবের একজন প্রবল অনুরাগী।
পারফরম্যান্সে যেমন সাকিব সবার ওপরে,বিতর্কেও।তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের তালিকাটা অনেক লম্বা।
সমর্থককে পেটানো,বোর্ডের কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করা, দেশের হয়ে না খেলার হুমকি দেয়া, কারণে-অকারণে ছুটি নেয়া,জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ,স্টেডিয়ামে এসেও টিম ফটোসেশনে অংশ না নেয়া,সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্পর্কে অভব্য মন্তব্য করা, বেয়াদবি করা,সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ – সাকিবের বিতর্কের তালিকা অনেক লম্বা। কিন্তু সাকিব সব বিতর্ক চাপা দেন পারফরম্যান্স দিয়ে। নানা অপরাধে সাকিবকে বিসিবি এবং আইসিসি বিভিন্ন সময়ে শাস্তিও দিয়েছে। কিন্তু শাস্তিতেও শুধরানো যায়নি।শেষ করে এসেই জড়ান নতুন বিতর্কে।
সাকিবের বিকল্প হিসেবে বোলার নেয়া হবে না ব্যাটসম্যান; এই দোটানায় পরে যায় ম্যানেজমেন্ট। এ জন্যই বোর্ড সাকিবের সব অন্যায় আবদার, অত্যাচার, শৃঙ্খলাহীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। কথায় বলে না, দুধেল গাইয়ের লাথিও ভালো। কিন্তু সমস্যাটা হলো লাথি খেতে খেতে বোর্ডের এখন কাহিল দশা।
সাকিবের একেকটি বিতর্ক ছাড়িয়ে যায় আগের বিতর্ককে। মনে হয়,এরচেয়ে বড় বোধহয় আর কিছু নয়।বিতর্কের তালিকা করলে,কোনটার চেয়ে কোনটা বড় এই নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়।
জুয়াড়িদের সাথে যোগাযোগের কারণে একবছরের নিষেধাজ্ঞার পর এবারের বিতর্কটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।অবশ্য আমার বিবেচনায় সাকিবের সবচেয়ে বড় অপরাধ,মাঠে এসেও বিশ্বকাপের টিম ফটোসেশনে অংশ না নেয়া।এই না নেয়াতে দলের প্রতি,সতীর্থ খেলোয়াড়দের প্রতি যে অবমাননা, অবজ্ঞা;তা বাকি সবার জন্য অপমানজনক।সাকিব বুঝিয়ে দিয়েছেন,তার পাশে ফটোসেশনে দাঁড়ানোর মত যোগ্য কেউ নেই।
সাকিব একজন পেশাদার খেলোয়াড়। অনেকে বলছেন,সাকিবের পছন্দ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা আছে।আর ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার যেহেতু লম্বা নয়,তাই ভবিষ্যতের নিশ্চিন্তির জন্য অর্থটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতেই পারে।সেটা দোষের কিছু নয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পেশাদার হচ্ছেন,এটা ভালো। কিন্তু পেশা হিসেবে ক্রিকেট আর দশটা পেশার মত নয়। একজন ক্রিকেটার চাইলেই,তার পছন্দ বেছে নিতে পারবেন না।তাকে বোর্ডের নিয়ম মেনে চলতে হবে।টাকাটা অবশ্যই দরকার।কিন্তু সেটা যখন দেশের চেয়ে বড় হয়ে যায়,তখন সেটা মানা যায় না, মানা উচিত নয়।অর্থ সবারই দরকার। কিন্তু সাকিবের আর কত অর্থ দরকার?
সাকিব যে আজ এত বড় তারকা,সে তো আমাদের বাঁধভাঙ্গা আবেগের জন্যই। সেই আবেগের মূল্য ক্রিকেটারদের দিতেই হবে। সাকিবকে যে আমরা জান দিয়ে ভালোবাসি,সেটা কেবল তিনি ভালো খেলেন বলেই নয়,তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলেন বলে।
বিরাট কোহলীও তো অনেক ভালো ক্রিকেটার।কিন্তু আমি তো তার সাফল্যে গলা ফাটাই না।কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাকিব যত ভালোই খেলুক,আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।আমি চাই সাকিব বাংলাদেশের হয়ে ভালো খেলুক।তার ভালোত্ব যেন বাংলাদেশকে মহিমান্বিত করে।গাইয়ের দুধটা পাবে নাইট রাইডার্স,আর লাথিটা খাবে বাংলাদেশ; এটা হতে পারে না।
লেখক সাংবাদিক কলামিস্ট।

