ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের হাতীবান্ধা এলাকায় ধানি গোল জাতের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষক।
বিভিন্ন কৃষকের নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১০ একর জমির ফসল।সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে বেশ কয়েকজন কৃষক।
উপজেলার বওলা বাজারের ধানি গোল বীজের খুচরা বিক্রেতা রহমত আলীর গাফিলতি আর অনিয়মকে দায়ী করছেন কৃষকরা।
এবং এই বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সোহাগ,আবু রায়হান ও শুভাষ পালের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার বিষয়টি সরেজমিনে ঘুরে দেখে গেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম কামু।
কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন,খুব আশা করে ধানি গোল রোপণ করেছিলাম।এখন ধানের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।ক্ষেতের কাছে আসলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না বাড়ি চলে যাই।
কৃষক সুভাষ পাল বলেন,নগদ-বান্দায় জমি রেখে ধান লাগিয়ে ছিলাম।কিন্তু ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেল।বউ বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলবো?এখন এটা ভেবে রাতে ঘুমাতে পারি না।শুধু তো আমার নয়,এলাকার অনেকেরই এই অবস্থা।কি যে হবে ভগবানই জানেন।
উপসংহার/অধিক খাদ্য উৎপাদনের যুক্তি দেখিয়ে হাইব্রিড ধানের চাষ সম্প্রসারণ করার ব্যথ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।হাইব্রিড ধান প্রধানত:বোরো মৌসুমেই আবাদ করা হয়।কৃষি মৌসুম হিসাবে বোরো বা রবি মৌসুম বাংলাদেশে সবচেয়ে নিরাপদ মৌসুম অথচ হাইব্রিড ধান প্রবর্তনের সময় থেকেই প্রতি বছর কৃষক পর্যায় হাইব্রিড ধানের ফসল হানির ঘটনা ঘটে চলছে।পত্র পত্রিকায় এ সম্পর্কে এপ্রিল – মে মাসে কিছু লেখালেখি হয়।তারপর আবার যেমন তেমন।
বোরো মৌসুমে বীজ তলায় ধানের বীজ বপনের সময় হলে রেডিও,টেলিভিশন ও খবরের কাগজে নানা রকম চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।শুধু বিজ্ঞাপন নয় বিশেষ বিশেষ টেলিভিশনে নিজস্ব প্রতিবেদকের আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান মালা প্রচারিত হয়।নানা কৌশলে কৃষককে হাইব্রিড ধান আবাদ করতে উৎসাহিত করা হয়।দেশ বিদেশে হাইব্রিড ধানের সাফল্যের চিত্র দেখানো হয়।কৃষকরা হাইব্রিড ধান চাষ করে অতীতের ক্ষতির কথা ভুলে গিয়ে অথবা অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য আশায় বুকবেধে আবার হাইব্রিড ধানের আবাদ করেন।ফল যা হবার তাই হয়।কৃষক আবার ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ফসলের জাত ও হাইব্রিড ছাড় করার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।১৯৯৮ সাল থেকে হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানী হচ্ছে।যথেষ্ঠ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে।ইতোমধ্যে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে।কৃষক,কৃষি এবং খাদ্য সার্বভৌমত্বের স্বার্থে অবিলম্বে ধানি গোল হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানী নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
ধানি গোল জাতের ধানের ক্ষতি সর্বমোট উৎপাদিত ধানের তুলনায় সামান্য বলে এই বিষয়টির উপর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না|কিন্তু এই ধানের ক্ষতি যদি আমাদের উৎপাদিত ধানের একটি বড় অংশ কখনো হয় তার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি কী আমাদের আছে?
ধানি গোল ধানের ক্ষতির কারণ প্রকাশে গাফিলতি,ক্ষতিপূরণ নিয়ে মিথ্যা আশ্বাস,এবং বীজ বিক্রেতাদের উদাসীনতা এই সব কিছু আভাস দেয় যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও এর বাস্তবায়ন কখনই হয় না|
কখনো কখনো পরবর্তী বছরে বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করে এই ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে বীজ বিক্রেতারা|বাজারমুখি ব্যাবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের মীমাংসা সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় না বলে সব চাইতে ক্ষুদ্র ও দরিদ্র কৃষকেরা এর ফল ভোগ করে|
আমরা চাই সরকার এই বীজ বিক্রেতাদের বাজারীকরণ,বিতরণ,ক্ষতিপূরণ আদায়,ও সর্বোপরি গুনগত মান নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক|অনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিকীকরণ যেন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে সেই বিষয়ে জনগণকেও সোচ্চার হতে হবে|
যেই খাদ্য নিরাপত্তার অজুহাতে হাইব্রিড ধানের ফলনকে সরকার বাজারে বিপননের অনুমতি দিয়েছে,বীজের বাণিজ্যিকীরণের স্বার্থে বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে,সেই একই অজুহাতে হলেও সরকারের কর্তব্য কৃষকের স্বার্থ নিশ্চিত করা|কিন্তু সরকার যদি এই বিষয়ে নির্বিকার থাকে এবং বাজার অর্থনীতির সংকট মুহূর্তে পরিত্রাণদাতার বদলে পরিব্রাজকের ভূমিকা পালন করে তাহলে এই উন্মুক্ত বীজের বাজারের ভয়াবহ পরিণতিতে কৃষকের কপাল পুড়ছে থাকবে এবং তারা একসময় নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে।

