শীত এলেই বাঙালির মনে পড়ে শীতের পিঠার কথা। পিঠা ছাড়া বাংলার শীত যেন পরিপূর্ণ হয় না।ঐতিহ্যবাহী শীতের বাহারি পিঠা খাওয়ার রীতি বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ।
একসময় পাড়ায়-পাড়ায়,মহল্লায়-মহল্লায় ছোট-বড় সকলেই পিঠা খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠতো।কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়েনা। কর্মচাঞ্চল্য এই ব্যস্তময় জীবনে তা এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে।
অথচ শীতের পিঠা বানানোর ধুমধাম আয়োজন পাড়া-গাঁয়ে কিংবা কৃষকপল্লীতে আর চোখে পড়ে না।আত্মীয়-স্বজন আছে আগের মতোই,নেই শুধু মধুর সম্পর্ক।মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলেও কমেনি মনের সংকীর্ণতা।
সবাই যেন আত্মকেন্দ্রিক,কেউ কারও খোঁজ রাখতে চায় না।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা,বদলে যাচ্ছে রুচি।হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা তৈরির সেসব উৎসবমুখর আমেজ।
সময়ের পরিক্রমায় অনেক পুরাতন অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে।বর্তমান নাগরিক জীবনে এখন আর সেই উৎসব আমেজ নেই।কৃষকের ঘরে হেমন্তের পাকা ধান ওঠে।কিন্তু হয় না সেই পিঠার আয়োজন।
পাড়ায় পাড়ায় খুঁজেও পাওয়া যাবে না গাছিদের।খেজুরের রসের হাঁড়ির সন্ধানও পাওয়া এখন দুষ্কর।এভাবেই অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি পিঠা উৎসব।
যেসব বাহারি স্বাদের পিঠা ছাড়া গ্রামবাংলার মানুষ বিয়ে,উৎসবের কথা চিন্তা করত না,এখন সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে বিদেশি খাবার।অথচ বাঙালি কত শত রকমের পিঠা যে তৈরি করত অঞ্চলভেদে এর নাম ও উপকরণের ভিন্নতাও ছিল।স্বাদে আহ্লাদে একসময়ে খাওয়া এই পিঠার নাম এখন কেবলই পুঁথিবদ্ধ হয়েই আছে।
হাতে গোনা কিছু পিঠা থাকলেও এর সিংহভাগই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে।অঞ্চল ভিত্তির পিঠার চলও এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে।
আজকের ব্যস্ত জীবনে শহরের ইট-কাঠের খাঁচায় আর সেই গ্রামের মেঠোপথ ধরে ঝাপসা কুয়াশায় পাওয়া যায় না সকালের খেজুরের রস।সূর্যের কোমল মিষ্টি রোদের হাসিতে খাওয়া হয় না রসের পিঠা।তবে নাড়ির টান যে আজও অনুভূত হয় সংস্কৃতির তরে।তাই শহরবাসীর পিঠার চাহিদা মেটাতে অলিতে গলিতে,রাস্তার মোড়ে, বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে বসেছে ছোট ছোট পিঠার দোকানে। শীতের পিঠার স্বাদ নেয়।
কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে।গ্রামের গৃহিণীদের মধ্যে আগের মত পিঠা বানানোর উৎসব নেই।এখন পিঠা বানানোটা অনেকটা স্মৃতি হয়ে গেছে।আগের সেই পিঠা বানানোর দিনগুলো হারিয়ে গেছে অনেকদিন আগেই। গ্রাম বাংলার স্মৃতিময় পিঠা প্রজন্ম থেকে হারিয়ে এখন তা স্মৃতি হয়ে গেছে।

