ফেনীতে বানিজ্যিক ভাবে মিশ্র ফল চাষে সাফল্য এনেছেন ‘জান্নাত এগ্রো বিডি’ ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর, আমিন বাজার সংলগ্ন স্থানে শিক্ষিত তিন উদ্যেক্তা তোফায়েল আহমেদ রনি, ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ও হাফেজ জাহিদুল ইসলাম প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যায় করে এ এগ্রো গড়ে তুলেছে।
সরজমিন গুরে উদ্যেক্তা তোফায়েল রনির সাথে আলাপ করে জানা গেছে,গত বছর জানুয়ারি মাসে তার বন্ধু ফরিদ উদ্দিন মাসুদের অনুফেরনায় তার আরেক বন্ধু হাফেজ জাহিদুল কে সাথে নিয়ে ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজার সংলগ্ন স্থানে ৫ একর জায়গায় ইজারা নিয়ে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগীতায় ও পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করে। শুরুতে চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া,শেরপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশী বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করে। গত এক বছর গাছ পরিচর্জা করে, গত মাস থেকে বরই গাছে ফল ধরতে থাকে এবং বিক্রি শুরু করে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এগ্রো তে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি বরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় এক লক্ষ টাকার বরই বিক্রি হয়েছে। আগামী ২ মাস পর তার এগ্রোতে থাই পেয়ারা বিক্রি করা সম্ভব হবে। ৪ প্রজাতির ১৬ শ বরই গাছ রয়েছে এর মধ্যে টক মিষ্টি, থাই মিষ্টি, বলসুন্দরী, বাউকুল রয়েছে, ১৬ শ পেয়ারা গাছ রয়েছে থাই ও বারোমাসী, বিভিন্ন প্রজাতির ২০ টি আংকুর, ২৬ প্রজাতির ৬ শ আম গাছ ,১৩ প্রজাতির ড্রাগন, ৫৩ প্রজাতির মাল্টা,২ প্রজাতির কমলা,৪ প্রজাতির ডালিম,২ প্রজাতির পেঁপে, ১ প্রজাতির বুকলি,৫ প্রজাতির মালবেরি,৪ প্রজাতির লেবু,১ প্রজাতির এবেগাড়ো, এক প্রজাতির আলুবোখারা, সহ বিভিন্ন ধরনের ১২ মাসী শাক ও সবজি উৎপাদন হচ্ছে।
বর্তমানে তাদের বাগানে প্রায় ৭/৮ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছ রয়েছে। তবে তাদের মূল প্রজেক্ট হচ্ছে,বরই, আম, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন,আংকুর ফল। বতর্মান মৌসুমে ফসল হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন জাতের বরই কুল । বর্তমানে তাদের বাগানের প্রতিটি গাছে বিভিন্ন জাতের কুল ঝুলছে। কুলের গায়ে রঙ আসতে শুরু করেছে। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পুরো বাগানটি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা তাদের কুল বাগান দেখতে আসছে। অনেকেই নতুন নতুন বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এবং কিছুদিনের মধ্যেই অন্যান্য জাতের কুলগুলো বাজারজাত করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
বাগানে ফলন এখন পুর্যন্ত খুবই ভালোই দেখা যাচ্ছে । সামনে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে, আশা করছি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার কুল বিক্রয় করা সম্ভব হবে। বরই শেষ হলে পেয়ারা বিক্রি শুরু হবে এ ভাবে পর্যায়ক্রমে মাল্টা, কমলা,আমা,লেবু পেঁপে সহ একটির পর একটি বিক্রি করার উপযোগী হয়ে উঠবে।
ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জানান, তাদের বাগানে বর্তমানে ১৩ প্রজাতির দূলর্ভ ড্রাগন গাছ , কয়েক জাতের আংগুর, ডালিম ও মালবেরি, ১২ মাসী থাই পেয়ারা ও মাধবী পেয়ারা গাছ রয়েছে।
জান্নাত এগ্রো বিডির আরেক উদ্যোক্তা হাফেজ জাহিদুল ইসলাম জানান, কৃষিকাজের প্রতি তার আগ্রহটা আগ থেকেই। যে কারণে তিনি দেশে বিদেশী ফল চাষে সাফল্য আনার চেষ্টা করছেন। তারা তাদের খামারে ফলের পাশাপাশি বেশ কিছু সবজি চাষও করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, কলি, সীম, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও বিভিন্ন রকমের শাক। এখানে তারা ৩ জন উদ্যোক্তা ছাড়াও আরও ৩/৪ জন লোক কাজ করে। আর রাতের বেলায় সিকিউরিটির জন্য একটা জার্মান থেকে আনা একটি প্রশিক্ষিত কুকুর যার নাম জার্মান শেফার্ড উক্ত কুকুরটি রাতে বাগানের চার পাশে দারোয়ানের মত রাত জেগে পাহারা দেয় কোন ধরনের সন্দেহ ভাজন মানুষের লেষ পেলে সে চিৎকার দিয়ে উঠে এতে এগ্রোর অফিসে থাকা পাহারাদারা জেগে উঠবে।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতা শারমিন আক্তার জান্নাত এগ্রো বিডি আমরা কয়েকবার পরিদর্শন করেছি তিন বন্ধু মিলে ব্যাক্তি উদ্যেগে প্রথমে ছোট পরিসরে এটি চালু করেছে পর্যায়ক্রমে এলাকার অনাবাদি জমি লিজ নিয়ে বড় পরিসরে কাজ শুরু করে। আমাদের হাটিকালচারের কারিগরী সহায়তায় তারা মিশ্র ফল পুষ্টি বাগানটি সফলতা দেখছে। এতে একদিকে সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন পুষ্টি চাহিদা মেটানো বেকারত্ব কমিয়ে আনা, অর্থিক ভাবে লাভবান হবে। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরক নানা বিষয়ে উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছি। কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার আরো বলেন পড়া লেখার পাশাপাশি যে কেউ ছোট ছোট করে পুষ্টি বাগান করে উৎপাদন করলে জমিও ব্যবহার হবে অর্থিক ভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে।

