ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বল্লামুখী বাঁধ পরিদর্শন শেষে পরশুরামের এক প্রথসভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন,
রাষ্ট্রকে ভালো জায়গায় নিতে হলে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত একটা দেশ আমাদের লাগবে। যেখানে কোন দুর্নীতিও থাকবে না, দুঃশাসনও থাকবে না। আল্লাহ তাআলার কোরআনের ভিত্তিতেই কেবল এটা সম্ভব। জামায়াতে ইসলামী সেই কুরআনিক শাসনের জন্য লড়ে যাচ্ছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফেনী সফরকালে পরশুরামের বল্লামুখার বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে এখানে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার সময়ে এসে কিছু করতে পারিনি তাই নৈতিক দায়িত্ববদ্ধতার জায়গা থেকে আবার মানুষের খোঁজ খবর নিতে এসেছি। এ বাঁধ দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে। ভারতের অংশের ভাঙার কারণে আমার দেশের মানুষ কষ্ট করছে এটি হতে পারে না। কোনো দেশ এভাবে নদীর বাঁধ কেটে অন্য দেশকে বিপদে ফেলতে পারে না। এটার নজির নেই। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সামাধান করতে হবে।
উল্লেখ্য, এই মুুহুরী নদীর এই বাঁধটি বন্যার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অন্যায়ভাবে কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে ফেনীসহ কয়েকটি এলাকা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে।
বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নদীতে যেসব বেড়িবাঁধ দেয়া হয়েছে সেগুলোও ভেঙে গেছে। অতীতে এগুলাতে দুর্নীতি হয়েছে তা না হলে বার বার ভেঙে পড়ত না। বৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণ করেনি। তারা লোভ করেছে, অপকর্ম করেছে। দুর্নীতি করে মানুষকে বছর বছর কষ্ট দিয়েছে। আমরা চাই এমন সরকার হোক গ্রাম থেকে শুরু করে সংসদ সব জায়গায় মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকবে, সততা থাকবে। যেখানে মানুষের আমানতের খেয়ানত হবেনা।দেশের সম্পদ ব্যয় হবে মানুষের উন্নয়নের জন্য।
এর আগে শহীদ শ্রাবণের কবর জিয়ারত ও উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। ন্যূনতম সংস্কার না হলে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে না, ধৈর্য ধরে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, এমন একটি নির্বাচন হতে হবে যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যর সঙ্গে সব ভোটার ভোট দিতে পারে এবং সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। সেটি দেশে এবং বিদেশে দুই জায়গাতেই হতে হবে। কারণ নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসীদের বিশাল অবদান রয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সরকার হোক, গ্রাম থেকে শহর সব যায়গায় যেন তাদের দায়বদ্ধতা থাকে। জনগণ দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়েছে, সেইদিন যেন আর ফিরে না আসে।
এর আগে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ইশতিয়াক আহম্মদ শ্রাবণের কবর জেয়ারত করেন তিনি।এসময় নিহত শ্রাবণের আত্মার মাগফিরাত ও শহীদি মর্যাদা কামনা করে তিনি বলেন, শহীদের মা-বাবারা গর্বিত, বীরের অভিভাবক হওয়া সকল পিতা মাতার ভাগ্যে থাকে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সবসময় শহীদদের স্মরণে রাখব।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত ও আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, শহীদদের পরিবারের চোখের পানিতে আল্লাহ হাসিনার পতন কবুল করেছেন। এতবড় পরিবর্তন হয়েছে এবং যারা এর জন্য ত্যাগ তিতিক্ষা করেছে, যাদের জন্য এ নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তাদের প্রতি সম্মান রেখে আমরা ৩টি কাজকে প্রাধান্য দিয়েছি। শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, আহত পঙ্গু যারা তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সেটি সরকারসহ সবাই মিলে করতে হবে। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করছি। দলীয়ভাবে আমরা যতটুকু সামর্থ্য তা করে যাচ্ছি।
পরে ফুলগাজীতে এক পথসভায় তিনি বলেন, যে যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য সন্তানরা জীবন দিল সে যন্ত্রণা যাতে আর কোন শাসকের দ্বারা ফিরে না আসে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের সম্পদের দিকে যাতে কেউ কুনজর না দেয়। আমরা একটি সুন্দর মানবিক সম্মানের বাংলাদেশ গড়তে চাই।
যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শহীদদের রক্তকে সম্মান দেখাতে হবে। তারা এসব যন্ত্রণা থেকে দেশকে বাঁচাতে জীবন দিয়েছেন। শহীদদের কেউ অপমান করবেন না। সবাইকে ভালোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আল্লাহ আমাদের কল্যাণের বিধান দিয়েছেন। এ বিধানের আলোকে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়তে হবে। সবার সহযোগিতায় মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াত ইসলামকে সহযোগিতা করুন। আমরা সবার সমর্থন প্রত্যাশা করি। আমাদের ভুল হলে সমালোচনা করুন। মনপ্রাণ উজাড় করে আমাদেরকে ভালোবাসুন।
ফেনী সফরকালে বিকালে শহরের একটি কনভেনশন হলে জুলাই বিপ্লবে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সন্ধ্যায় নোয়াখালী যাওয়ার পথে দাগনভুঞা উপজেলায় আরও একটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

