ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ২ নং রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম রত্নার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিগত সময়ে ‘অবৈধ ভোটে’ নির্বাচিত হওয়া এই জনপ্রতিনিধির দৌরাত্ম বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও বহাল রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, মমতাজ বেগম রত্না রাজাপুর ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার স্বামী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি সহজেই প্যানেল চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন।
টাকার বিনিময়ে নাগরিক সেবা বিক্রির অভিযোগ: নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি টাকার বিনিময়ে নাগরিক সেবা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড, ভিজিডি কার্ড এবং ওয়ারিশ সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা নিতে হলে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া তিনি কোনো সেবা দিতে নারাজ বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
রাজাপুর ইউনিয়নের স্থানীয় এক বিএনপি নেতা দাবি করেন, কিছু বিএনপি ও জামায়াতের লোককে ম্যানেজ করে এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই ইউপি সদস্য বহাল তবিয়তে আছেন।
তিনি ও তার স্বামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এম আবু নাছেরের ক্ষমতার প্রভাবে সাধারণ সেবা গ্রহীতারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবি রহিমা জানান, তার স্বামীর জন্ম নিবন্ধন সনদের সংশোধনের আবেদনের স্বাক্ষরের জন্য রত্না তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন।
রাজাপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন বলেন, তিনি একটি ওয়ারিশ সনদের জন্য দ্বারস্থ হলে বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে ২ হাজার টাকা দিলে তার কাজটি করে দেওয়া হয়।
বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে অসংখ্য অসহায় নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রত্নার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, বিগত আওয়ামী সরকার পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেক সদস্য আত্মগোপনে গেলেও মমতাজ বেগম রত্না কীভাবে এখনো বহাল তবিয়তে সরকারি বেতন ভাতা ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে শেখ হাসিনার ‘তৃণমূল কপি’ হিসেবে পরিচয় দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম রত্না বলেন, “এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি দুর্নীতিতে জড়িত নই। কিছু বিএনপি-জামায়াতের নেতা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ সামনে আনছে। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি।”
এদিকে, অভিযোগ সংগ্রহের পর গণমাধ্যম কর্মীদের ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে অভিযুক্ত সদস্য বিভিন্ন ফেক আইডি ব্যবহার করে চরিত্র হনন করছেন বলেও জানা গেছে।
২ নং রাজাপুর ইউপি সচিব আবদুল হালিম এ বিষয়ে বলেন, “আমি অনেক অভিযোগ পেলেও কিছু করতে পারব না। তারা কি করে এখনো বহাল আছেন, তা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনই ভালো জানে।
অভিযোগ ও তার বহাল তবিয়তে থাকা নিয়ে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি, এখনো সব গুছিয়ে উঠতে পারিনি। শীগ্রই তথ্য উপাত্ত যাচাই পূর্বক তদন্ত করে এ রকম যারা এখনো বহাল আছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                    
 
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                